ভিওইবি ডেস্ক : দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কর্মঘণ্টা বাড়ানোর সুপারিশ করবে ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন পরামর্শক কমিটি’। কমিটি এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুপারিশ করবে এবং সরকার তা বাস্তবায়ন করলে বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা বাড়তে পারে। প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। কমিটি ইতোমধ্যে সুপারিশ প্রণয়নের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, পুরো কাজ শেষ করতে জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটি গঠন ও সদস্যবৃন্দ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য ৯ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদকে প্রধান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়) মো. আসাদুজ্জামানকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন:
- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান
- উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মো রফিকুজ্জামান
- সাবেক অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ
- গণসাহায্য সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) বেগম সামসি হাসান
- ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম মারিয়াম
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ
- শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম
কমিটির কার্যক্রম ও সুপারিশ
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা এ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ৪৫টি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কাজ শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন। কমিটির সদস্যরা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করবেন। তবে প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে তাদের কিছু আপত্তি রয়েছে এবং তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন আনার সুপারিশ করবেন।
দেশের ৮০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি শিফটে চলে এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে স্কুলের শিখন ঘণ্টাও কম। তাই কমিটি কর্মঘণ্টা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলছে। এছাড়াও, শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, বিদ্যালয় শিক্ষাকে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রস্তাবও দেবে কমিটি।
কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ জানান, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নানা সমস্যা রয়েছে। কমিটি সুপারিশ করবে, তবে এর বাস্তবায়ন সরকারের উপর নির্ভর করে। তারা এমন সুপারিশ করবেন যাতে প্রাথমিকের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা দায়বদ্ধতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তারা শিক্ষার্থীর শেখার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং শেখার ঘাটতি সমন্বিতভাবে উন্নতির জন্য কমিটি কাজ করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হবে, তবে কিছু কাজ বাকি থাকলে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধার শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম জানান, তারা উপজেলা পর্যন্ত গিয়ে সব স্তরের মানুষের সাথে কথা বলছেন এবং নাইটগার্ড থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সবার মতামত নিচ্ছেন। তারা ইতোমধ্যে বেশকিছু ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন, যা তাদের সুপারিশে উল্লেখ করা হবে।
সংক্ষেপে, কমিটি প্রাথমিকের কর্মঘণ্টা বাড়ানো, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন, শিক্ষা কমিশন গঠন এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করবে বলে আশা করা যায়।