এরশাদুল বারী, ডেনমার্ক থেকে :
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবকে কোনভাবেই বেহাত হতে দেয়া যাবে না। এটার প্রথম শর্তই হবে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার সুযোগ ও তাদের পুনর্বাসন চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। ভারতের আধিপত্য নিশ্চিহ্ন করতে হবে এবং সমাজে ইনসাফ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই কেবল বিপ্লব পরবর্তী সফলতা আসবে।
শনিবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের নরেব্রোহেলেনে জুলাই রেভুলুশন ইউনিট ডেনমার্কের উদ্যােগে আয়োজিত পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দুপুরে দেশীয় বিভিন্ন খাবারের আয়োজন ফুড ফ্যাস্টিভ্যাল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে ডেনমার্কে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. আহসানুল হক আরিফ ও রাশিদ মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ পলিসি ডায়ালগে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুইডেনের ব্লেকিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (বিটিএইচ) অধ্যাপক ড. শহিদুজ্জামান কোরেশী ও ড. রিয়াজ উদ্দিন। জুলাই রেভুলুশন ইউনিট ডেনমার্কের সমন্বয়ক শামসুল ইসলাম চৌধুরী ও জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সমন্বয়ক মো. মুহিবুর রহমান। শিক্ষার্থী ও সিনিয়রদেরও অনেকে এতে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া প্রশ্নত্তোর পর্বে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যসহ অন্য অতিথিরা।
আলোচনায় অন্তরবর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, তার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বৈরিতা নেই, অপছন্দ নেই। এই বিতর্কের মধ্যেই সম্প্রতি আসিফ নজরুল তাকে ফোন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক কথা হয়েছে তার সাথে। তবে শুধু আসিফ নজরুল না, এই সরকারের ২/৩ জন ছাড়া বেশিরভাগেরই এতো বড় পরিসরে কাজ করার বা রাষ্ট্র পরিচালনার কোন অভিজ্ঞতা নেই। যার কারণে সুফল আসছে না। তাদের ব্যর্থতা রয়েছে। এটা মূলত কোন বিপ্লবত্তোর একটা সরকার হয়নি। এটাকে তারা একটা চাকরি হিসেবে নিয়েছে। আগের শাহাবুদ্দিন বা লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই একটা সরকার হয়েছে।
সম্প্রতি তিন উপদেষ্টা মিলে সিনেমা দেখতে যাওয়ার ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, তারা এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবের কোন শহীদের বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের খোজ খবর নিতে পারলো না, অথচ তিন উপদেষ্টা মিলে আরেক উপদেষ্টা ফারুকীর (মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী) সিনেমা দেখতে গেল। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। অথচ তাদের লজ্জা হয় না। এরা বোঝেই না কোন রক্ত মেড়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে।
দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ বা কোন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা আছে কিনা দর্শকের এমন প্রশ্নের জবাবে সামাজিক যােগাযোগের জনপ্রিয় এই আলোচক বলেন, আপাতত কোন রাজনৈতিক দল গঠনের কোন পরিকল্পনা নেই। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল গঠন বা নেতা হলে তো তখন আমি শুধু একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠি বা পক্ষের হয়ে কথা বলতে পারবো। কিন্ত এখন তো আমি সব পক্ষের হয়ে কথা বলতে পারছি এবং সমাজের ভালো কিছুর পক্ষে ও খারাপের বিপক্ষে জোড়ালো ভুমিকা রাখতে পারছি। রাজনীতিতে প্রবেশ করলে তো এতোটা বৃহৎ পরিসরে ভুমিকা রাখার সুযােগ থাকবে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সুইডেনের ব্লেকিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (বিটিএইচ) অধ্যাপক ড. শহিদুজ্জামান কোরেশী বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে এটাকে যেকোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। ছাত্র-জনতাকে সব সময় রাজপথে শক্তি দেখাতে হবে। কোনভাবেই যেন সেনা সমর্থিত সরকার দেশে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
আরেক অধ্যাপক ড. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অনুর্ধ -১৯ এর যুবকরা যদি ভারতের যুবকদের হারাতে পারে তাহলে একদিন জাতীয় দলও ভারতকে হারাতে পারবে। তাহলে ভুরাজনীতিতেও কেন আমরা ভারতকে পরাজিত করতে পারবো না? অবশ্যই পারবো। সে জন্য আমাদের তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে নতুন কিছু করার।