আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় বিস্ফোরণের পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘উরসা মেজর’ নামের একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪) টেলিগ্রামে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ইউনিট জানিয়েছে, জাহাজটির ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজে থাকা ১৬ জন রুশ নাবিকের মধ্যে ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং স্পেনের কার্তাখেনা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এখনো দুইজন নাবিক নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
স্পেনের সামুদ্রিক উদ্ধার সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার (ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪) স্থানীয় সময় সকালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জাহাজটি দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনের উপকূলে বিপদ সংকেত পাঠায়। জাহাজটি একদিকে হেলে পড়েছিল এবং একটি লাইফবোট নামানো হয়েছিল বলেও জানানো হয়। স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি হেলিকপ্টার ও উদ্ধারকারী নৌকা পাঠায় এবং জীবিত নাবিকদের বন্দরে নিয়ে আসে, যেখানে রেড ক্রস তাদের সহায়তা করে। পরবর্তীতে একটি রুশ যুদ্ধজাহাজ উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব নেয়।
জানা গেছে, জাহাজটি স্পেন ও আলজেরিয়ার মধ্যবর্তী জলসীমায় ছিল। রাতের মধ্যেই ‘উরসা মেজর’ সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়। স্পেনের উদ্ধার সংস্থার ভাষ্যমতে, উদ্ধারকৃত নাবিকরা জানিয়েছেন জাহাজটিতে খালি কন্টেইনার এবং ডেকে দুটি ক্রেন ছিল।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জাহাজটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ‘ওবোরনলজিস্টিকা’ নামক একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হতো। এই প্রতিষ্ঠানটি বেসামরিক পরিবহন ও লজিস্টিকস সেবাও প্রদান করে থাকে। ওবোরনলজিস্টিকার ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত মানচিত্র অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ রাশিয়ার নভোরোসিস্ক থেকে সিরিয়ার তারতুসে অবস্থিত রাশিয়ার নৌ ঘাঁটিসহ বিভিন্ন রুটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে, তখনই এই ঘটনা ঘটলো। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিইউআর সোমবার দাবি করেছে যে, রাশিয়া সিরিয়ার তারতুস বন্দর থেকে লিবিয়ায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।
মেরিনট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১২৪.৭ মিটার দীর্ঘ ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সুদূর প্রাচ্যের ভ্লাদিভোস্টকের দিকে যাচ্ছিল। গত সপ্তাহে ওবোরনলজিস্টিকা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাহাজটির ছবিসহ জানিয়েছিল যে, এটি বেশ কিছু বিশেষ বড় ও ভারী পণ্য বহন করবে, যার মধ্যে ছিল ৩৮০ টন ওজনের ক্রেন এবং ৪৫ টন ওজনের আইসব্রেকারের হ্যাচ কভার, যা ভ্লাদিভোস্টকে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, এই পরিবহন আর্কটিকের উত্তর সমুদ্রপথ উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার অংশ। এমন বিশাল পণ্য পরিবহনের জন্য সমুদ্রপথই সবচেয়ে উপযুক্ত এবং এই ধরনের কাজে প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্যদিকে, অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম এজেন্টসভো জানিয়েছে, এই হ্যাচ কভারগুলো নতুন পরমাণু আইসব্রেকার ‘লিডার’-এর জন্য তৈরি করা হচ্ছিল, যা আর্কটিকের উত্তর সমুদ্রপথে পুরু বরফ ভাঙার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত।
এই জাহাজডুবির পূর্বে, গত ১৬ ডিসেম্বর জ্বালানি তেলবাহী একটি রুশ ট্যাংকার মস্কো কর্তৃক অধিকৃত ক্রিমিয়া ও দক্ষিণ রাশিয়ার মধ্যবর্তী একটি প্রণালীতে আংশিকভাবে ডুবে যায়, যার ফলে বড় ধরনের তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল।