আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মোজাম্বিকের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতায় বিদেশী ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে বাংলাদেশী প্রবাসীরা, ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এই সহিংসতায় বাংলাদেশীদের জীবন ও জীবিকা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। পুলিশ এই পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এমনকি বাংলাদেশ দূতাবাসও তাদের কোন সহায়তা করতে পারছে না।
ফেসবুকে ‘সাইফ দ্য আফ্রিকান’ নামক একটি পেজে মোজাম্বিকে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক সাইফ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছেন, নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতার বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট করেছেন। তার মতে, সহিংসতার শিকার ৯৫% ব্যবসায়ীই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, “জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। আজ (২৩ ডিসেম্বর) চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দিন ছিল। আজকেও সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করায় বিরোধী দলের সমর্থকরা আন্দোলনের নামে বিদেশীদের দোকানপাট লুটপাট করছে, যার ৯৫% ই বাঙ্গালীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান! আজ এক রাতে নিঃস্ব হচ্ছে এই মোজাম্বিকের অসংখ্য বাংলাদেশী! পুলিশ বিদেশীদের এসব ঘটনায় নিষ্ক্রিয়! এম্বাসী এই দেশে সব বাঙ্গালী এতিম, কোনো এম্বাসী নাই!”
তিনি দাবি করেছেন যে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে দুর্বৃত্তরা বন্ধ দোকানগুলোতে লুটপাট চালিয়েছে এবং তার ধারণা অনুযায়ী, শুধুমাত্র এক রাতেই কয়েকশো দোকান লুটপাটের শিকার হয়েছে।
‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ উঠলে দেশটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা ভেনান্সিও মোনডলানে নির্বাচনী ফলাফল মানতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সমর্থকদের দেশব্যাপী বিক্ষোভ চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোজাম্বিকের সর্বোচ্চ নির্বাচনী আদালত দেশটির বিতর্কিত অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফল বহাল রেখেছে, যেখানে ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো পার্টি’র বিজয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ বিরোধী দল আরও বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ চলছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মোজাম্বিকে বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবাসীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে তারা কোনো প্রকার সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। মোজাম্বিকে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকেও কোন সহায়তা পাচ্ছেননা বাংলাদেশীরা। সহিংসতার শিকার বাংলাদেশী প্রবাসীরা দ্রুত এই অবস্থার অবসান এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।