আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরায়েল মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের পরিকল্পনায় ‘স্বাক্ষর’ করেছে এবং তারা হামাসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে দুটি পর্যায়ে ১০ জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জিম্মির লাশ হস্তান্তর করবে।
তবে হামাস কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবটি যুদ্ধের অবসানসহ মূল দাবিগুলো পূরণ করেনি এবং যথাসময়ে সাড়া দেবে হামাস।
ইসরাইলি সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামািন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার জিম্মিদের পরিবারকে জানিয়েছেন, তিনি উইটকফের পরিকল্পনা মেনে নিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ ইসরাইল গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ পুনরায় শুরু করে।
ইসরাইল বলছে, তারা হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে তারা ৫৮ জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৯ মে ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি বিস্তৃত আক্রমণ শুরু করে। এর মধ্যদিয়ে সেনারা গাজার সমস্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ১০ সপ্তাহে গাজায় প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি স্থল অভিযান এবং গাজাবাসীকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনার ফলে আরও ৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একটি প্রতিবেদন সতর্ক করে দিয়েছে, আগামী মাসগুলোতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্যের অভাবের মুখোমুখি হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিটকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি সৌদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া টিভির একটি প্রতিবেদন নিশ্চিত করতে পারেন যে, ইসরাইল এবং হামাস একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
জবাবে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করতে পারি, বিশেষ দূত উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট হামাসের কাছে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন, যা ইসরাইল সমর্থন করে। হামাসের কাছে পাঠানোর আগে ইসরাইল এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে। আমি নিশ্চিত করতে পারি, এই আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা আশা করি গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি হবে যাতে আমরা সমস্ত জিম্মিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পারি।
তবে হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তিটি পূর্ববর্তী আলোচনার বিরোধিতা করে। প্রস্তাবে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে; এমন বা গত গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তিনি বলেন, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছে এবং যথাসময়ে তাদের লিখিত প্রতিক্রিয়া জমা দেবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরাইল। হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫৪ হাজার ২৪৯ জন নিহত হয়েছেন।