নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও নকল করে প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কখনও ইউএনও, কখনও সরকারি কর্মকর্তার নকল স্বাক্ষর ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে টাকা, নেওয়া হচ্ছে সুবিধা। অথচ এসব প্রতারণা ঠেকাতে একটি প্রযুক্তিনির্ভর পথ দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তাবিত—ডিজিটাল সিগনেচার বা ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর। এবার সেই পথেই জোর দিচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত পাবলিক কী ইন্সফ্রাস্ট্রাকচার (পিকিআই) সামিট-২০২৫-এ এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কাগজপত্র জেনারেট হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ড, শিল্প মন্ত্রণালয়, হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, এনআইডি কর্তৃপক্ষসহ নানা সংস্থায়। অথচ এগুলোর অধিকাংশই এখনো ম্যানুয়ালি তৈরি হচ্ছে, যাচাইও হচ্ছে হাতে-কলমে। জনবল সংকটে প্রতিটি কাগজ যাচাই করা সম্ভব নয়। ফলে জালিয়াতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, ‘ডিজিটাল সিগনেচার ব্যবহার বাধ্যতামূলক না হলে আগামীতে বিদেশি সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেবে। কারণ বিশ্ব এখন ব্লকচেইন, এআই ও অটোমেশন প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে। ম্যানুয়াল কাগজপত্র যাচাই করার যুগ শেষ।’
সরকারের নানা দপ্তরের অনীহার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিজি বা সচিব পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা এসব প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়ায় উৎসাহ দেখান না। বাড়তি খরচের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। অথচ এই খরচটাই আমাদের ডিজিটাল ইকোনমির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষতি পূরণযোগ্য নয়।’
পিকেআই (পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার) এর গুরুত্ব তুলে ধরে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, ‘এটা শুধু ডিজিটাল স্বাক্ষর না, এর সঙ্গে যুক্ত আছে নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যাচাইকরণ এবং আস্থার কাঠামো। এটি ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও ডকুমেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং প্রতারণা প্রতিরোধ করে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যাচাই করে ডিজিটাল সিগনেচার বাস্তবায়নে একটি বিশেষ টিম কাজ শুরু করেছে। কিভাবে এই খরচ কমানো যায়, সাশ্রয়ী করে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
সবশেষে তিনি বলেন, ‘সরকারি কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারে সচেতন হন, তাহলে সরকারি কার্যক্রম হয়ে উঠবে প্রতারণা মুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর। দেশের সাইবার স্পেস হবে নিরাপদ, ভবিষ্যৎ হবে আস্থার।’
ডিজিটাল স্বাক্ষর শুধু একটি প্রযুক্তি নয়—এটি হচ্ছে প্রতারণা প্রতিরোধে ভবিষ্যতের আস্থা এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগের সূচনা। এখন প্রয়োজন নীতিনির্ধারকদের দৃঢ় অঙ্গীকার ও দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ।